Thursday, November 22, 2012

রাজন ভট্টাচার্যের দুটি কবিতা


গতি পথ
............রাজন ভট্টাচার্য

অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হলো আমাকে
একটু পথের জন্য
একটু পথের জন্য
পুরো পথেই ছিল
সীমাহীন দুর্ভোগ আর লাঞ্ছনা
কষ্ট আর যন্ত্রনায়
আমি পুরোপুরি কাতর
অনেকটা আর না পারার মতো,
তবু হাল ছাড়িনি
পথের খোঁজে পথে-পথে নানা পথ
আঁকা বাঁকা আবছা গলি
নানা শব্দ, নানা উচ্চারণ!
ঝুঁকিতে বাঁকা হয়ে যায় চলার গতি পথ
ছোট্ট পথের প্রয়োজন ছিল বেশ
যে পথ পেলেই আমার কষ্ট মিটে যাবে
সবার কষ্ট শেষে



চেতনা
............রাজন ভট্টাচার্য

রক্ত দিলে কি এমন তি হতো তোমার?
সর্বোচ্চ হতে পারতো শরীরের পুরো বক্তই হয়ত ঝড়ে যেত!
বাঁচা মড়ার নিশ্চয়তা হয়তো থাকতো না ,
তবে মৃত্যুর মতো কোন অঘটনের সম্ভাবনা ছিল না-
তবে কেন দ্বিধা ছিল তোমার? রক্ত ঝড়াতে
একটু রক্ত দিলেই
রহিমাদের হত্যার বিচার পেতাম
একটু প্রতিবাদ করলে
বিপ্লবকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচানো যেতো
মিছিলে গেলেই
গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামী মানুষগুলো সান্তনা পেত
অনশনে গেলে
শিশুরা অধিকার পেত,
মানববন্ধনে গেলে
আমরা অধিকারের লড়াই শিখতাম
সমাবেশ করলে
আমরা দুর্দশা আর যন্ত্রণার কথা তুলে ধরতে পারতাম
একটু সোচ্চার হলে
অন্যায়কে না বলতে শিখতাম
মাদককে অবহেলা করতে শিখতাম
অধ্যাপক গোপাল কৃষ্ণ মুহুরি হত্যার বিচার চাইতে পারতাম,
একটু খেয়াল রাখলেই
সবাইকে ভালবাসতে পারতাম
ভালো বাসলেই
সকল চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে শিখতাম
কি এমন তি ছিলো তোমার রক্ত দিতে?


‘বর্ষায় রোদনের গান’ কাব্য গ্রন্থের শিমুল মিলকীর এক গুচ্ছ কবিতা


যুগল
...শিমুল মিলকী

হাওয়ায় নেচে ওঠো পাতার মতো সবুজ
সূর্যের আঙুলে আরণ্য বিলাও
কিট পতঙ্গ যাই হোক পোষে রাখো যতনে

ফলত মেঘ দেখো চিবুকে কেমন ঘন হয়
চোখের নুনায় কিভাবে হারায় চাষি সাগরবিলাপ

যে মুখে অস্ত, ঠিক সেইমুখে ভোর
বৃষ্টিতে হাসে পাতার বাঁশি
তালে নাচে অসম্ভব অজানা সব সবুজ ঢেউ

সত্যি অরণ্য আর মেঘ ভূমির যুগল সন্ন্যাস

মাকড়মণ্ডল
...শিমুল মিলকী

বাসাকে জাল ভেবে শ্নির বলয় ভাব
এমন শিল্পে অনভ্যস্ত মানুষ থাকে হাওহায়

মানুষের জন্য এই রসায়ন হঠা ভূপাতিত হলে
তন্ত্রবলে হয় মনোরম

জাল না বলে বাসা বলো
দিমসুদ্ধ ঝুলে থাকা নিবাসে ভূমির আনন্দ দেখো

এখানেই রাঁধুনি সপ্তাহান্তে তুলে ঝাড়ুর প্রলয়
ঝরে পরে অবিশ্বাস্য জালের শিল্প কারিগর

এরূপ বুননে জড়িয়ে দেখো
পৃথিবী রসায়ন রোদনে কতটা অস্থির হয়


মাহমুদ সীমান্তর এক গুচ্ছ কবিতা

দূরত্ব
....মাহমুদ সীমান্ত

গ্রামের কুয়াশা ভেঙে তুমি যাচ্ছো নিরন্তর
দিগন্তের কাছাকাছি মাঠ পেরিয়ে গেলেই তোমার গ্রামের বাড়ি
তুমি তাই দিগন্তের ভাষা বোঝ, বোঝ মাঠে মাঠে ফসলের উর্বরতা
বেলাভূমির ঘাসেদের মাড়িয়ে গিয়ে শিখেছি তোমার শীতলতা,
এখন মাইল মাইল দূরের দিকে...
হেঁটে যেতে যেতে তোমার ছবি দেখতে পাই
তুমি চলে যাবে দূরে আর তাকিয়ে দেখবে-
তোমার গ্রামের মুখ ছুঁয়ে ওঠা ভোরের সে সূর্য;
নদীর বুকে চর জেগে উঠলে,
তুমি চলে যাবে দূরদেশে- বাণিজ্যের ধারণায়
(...ভাঙনের প্রতিক্রিয়া...)
বৃক্ষ
....মাহমুদ সীমান্ত

একদিন বৃক্ষ হয়ে যাবো!
ঠাঁয় দাঁড়িয়েই হবে, সর্বময় বিস্তার আমার
ডাল-পালা জুড়ে বসে যাবে অতিথি পাখির ঘর-
পাখিদের ঘর হবো, পাতাদের সাথে খেলা হবে বাতাসের;
সুদূরের কথার গুঞ্জন আমাকে ঘিরেই অনুস্মৃত হবে,
মেঘ চাইলে মেঘ, রোদ চাইলে রোদ
পৃথিবীতে কত কত বৃক্ষমর্ম, বৃক্ষকথা রচিত হয়েছে!
এইসব বৃক্ষকথা, সকল প্রাণির মতো মানুষেরা-
জেনে গেছে; তাই আঙিনায় পদধ্বনি তার
সকল ক্লান্তির শেষে আমাকেই বলে যাবে
পৃথিবীর যত যত কাহিনী ব্যঞ্জনা
একদিন বৃক্ষ হয়ে যাবো...
ঠাঁয় দাঁড়িয়েই হবে সর্বময় বিস্তার আমার

আবদুর রাজ্জাকের এক গুচ্ছ কবিতা


আগুন
....আবদুর রাজ্জাক

কোন পথে ছুটেছেন? নিয়ন্ত্রণ আপনারই কাছে
সামনে আগুন- নিশ্চয়ই নিজেকে পুড়িয়ে খাবেন না
শুকিয়ে রাখা শস্য দানা জলে ফুটিয়ে একটু একটু করে
টানছেন নিজেরই ভেতরে
এত সবে হুশ থাকে! তবে মাঝে মাঝে কেন
আগুনে ঝাপ দেবার ইচ্ছে জাগে

মুকুট
....আবদুর রাজ্জাক

অলস দিনের কল্পনায় যে মুকুট উঠেছিলো
সন্ধ্যা রাতে আধা চাঁদের ঢিমি আলোয়,
দু চোখে মায়া মেখে কি জবাব দিয়েছিলো?
যে ঘর তোমাকে চেনেনি- তাকে আঁকড়ে ধরে
পাখি জীবন খাঁচার বন্ধনে খুঁজে ফেরো
কতদিন এভাবে মকুটের জঞ্জাল খুঁজে ফিরতে হবে
আর, নালা নর্দমায় শরীর ভিজে যাবে


সরোজ মোস্তফার কবিতা এক গুচ্ছ কবিতা


শালিক পাখির জন্য
....সরোজ মোস্তফা

বিরিয়ানির প্যাকেট কিনতে না পারলেও
বিকেল বেলায় ওর গালে চুমো খেতে পারি
ওর আঙুল গুলোতে কার্তিক মাসের পলিমাটি
সে আঙুল ছুঁয়ে দিলে নড়ে উঠে ধান গাছ
ওকে তাই রঙ পেনসিল কিনে দিয়ে বলি
তোকে আর ছবি আঁকতে হবে না

ভাই
....সরোজ মোস্তফা

আক্রোশ দেখাতে গিয়ে দেখি
সাদা শার্ট ক্ষোভে, রক্তে ভিজে গেছে
মেহগনির রঙিন তক্তা গুলো নিয়ে
নারিকেল গাছসহ উড়াল আদর নিয়ে
দূরে চলে গেছে ভাই
আমিও পেয়েছি জমি
এ জমির ফুল কাকে দেব
কাকেই বা দেখাব রক্ত


আনোয়ার হাসানের এক গুচ্ছ কবিতা

ছোট বেলা
........আনোয়ার হাসান
হেমন্তকে দেখেছি আমি
উজ্জ্বল তরণীর মত
শ্যামল প্রান্তরের বুক ছিঁরে
প্রবহমান নদী বালিকা
গায়ে তার সোনালী ঝরোকার সাজ
চরের বালিতে তখন
সোনলী সূর্যের খেলা
হেমন্তকে ঘিরে এই
আমার ছোট বেলা

বিজয়
........আনোয়ার হাসান
সংখ্যা গুলো যদি সাজানো যায় এভাবে
প্রথমে একুশ
এরপর ষোল
আর এইতো ইতিহাস
একুশ তো একটি সংখ্যা নয়
একুশ আমাদের চেতনা।
তেমনি ছাব্বিশ আমাদের অস্থিত্ব
আর ষোলতে অস্থিত্বের বিজয়।



মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ'র দুটি কবিতা


সবিশেষ বৈষম্য
........মোহাম্মদ শহীদুল্লা'
নীল আকাশটার কাছাকাছি আমি
নাকি আমার কাছটায় নীল
শাদা কাশবনের পাগলামোর মত আমি
নাকি আমার মত যাপাটে কাশবন
পালের বুকে ঠেসে ধরা বাতাসের পাঁজর
নাকি বাতাসের পাঁজরে আছড়ে পড়া পাল
জ্বলের কণায় কনায় বৈঠার দাপাদাপি
উঠে জ্বলে চকমকি পাথর
যায় উড়ে পুলকে পাখালী যত
বাজে শঙ্খ গরজন ঢোলের
মৌ-চোরা যখন আনাগোনা করে
মেলেনা কিছুতেই সাতরংয়ের সরল আত্মীয়তা

দূর্ঘটনার সুরতহাল
........মোহাম্মদ শহীদুল্লা'
দূর্ঘটনার সুরতহাল
তীব্রতর একটা ঝাঁকুনী
বাংলাদেশের মানচিত্রে দুঃসময়
জলমগ্ন এক শিল্পতরুর কপাল
হলুদ সূর্য ডুবোডুবো
কার্নিশে রোদালু বিকেল আছড়ে ঢেউ সমুদ্রের
মত পড়ছিলোপ্রবঞ্চকেরা পেপসোডেন্ট
হাসি হাসছিলোঅলুণে সন্ধ্যায়
সালেহার উঠোনে,
আজিমপুরে ফুলের পাহাড় বেয়ে নামে
অশ্রু পায়ের নীচে
ঠনঠনে বর্তমান (পলেস্তরাহীন)
বিহঙ্গ সভায় শোক প্রস্তাব কাগজে
অতঃপর ভোজবাজির রঙ্গীন গেলাস
নয়া জামানার যান্ত্রিক জলসায়